সোর্সঃ অনলাইন |
ঈগলের ৫ নীতি, অনুসরণে হতে পারে তোমার উন্নতি
মহান আল্লাহ পৃথিবীকে এমনভাবেই সৃষ্টি করেছেন যে প্রকৃতির কাছ থেকেই মানুষ শেখার জন্য খুঁজে পায় অসংখ্য উৎস। সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে মানুষ দাবিদার হলেও পশুপাখিদের কাছ থেকেও কিন্তু আমাদের শেখার আছে অনেক কিছু! নেতৃত্ব থেকে শুরু করে মিতব্যয়িতা, পারিবারিক বন্ধন ইত্যাদি অনেক কিছুই আমরা পশুপাখিদের দৈনিক কার্যক্রম দেখে শিখতে পারি।
আমরা ঈগলকে চিনি শুধুমাত্র একটি শক্তিধর, দক্ষ একটি শিকারি পাখি হিসাবে। তবে পাখির রাজা ঈগল নিজের জীবনে মেনে চলে ৭টি মূলনীতি যা আমরা মানুষ হিসাবে আমাদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয় ও অনুসরনীয় হবে।
এবার চলুন দেখে আসি এই ৭টি নীতি এবং তা হতে প্রাপ্য শিক্ষাগুলো!
নীতি- ১:
ঈগল পাখি অনেক উঁচুতে উড়ে এবং কখনোই চড়ুই কিংবা অন্যান্য ছোট পাখিদের সাথে এরা মেশে না এবং উড়েও না।
ঈগল পাখি যেই উচ্চতায় উড়ে বেড়ায়, সেই উচ্চতায় অন্য কোন পাখি উড়া তো দূরের কথা, সেখানে পৌঁছাতেও পারে না। এজন্যেই ঈগল একা ওড়ার সিদ্ধান্ত নেয়, কারোর সাথে দল বেঁধে নয়।
এখান থেকে প্রাপ্য শিক্ষা:
কাক-চড়ুই পাখিরা যেহেতু ঈগলের সমান এতো উঁচুতে উড়তে পারে না, তাই ঈগল তাদের সাথে দল বাঁধে না।
মানুষ হিসাবে আমাদেরও জীবনে চলার পথে এমন মানুষগুলোর সাথেই চলতে ফিরতে মিশতে হবে যারা আমাদের সমান স্বপ্ন দেখে, যাদের সাথে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি মিলে, যাদের সাথে থাকলে আমাদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন সম্ভবপর হবে।
আমাদের বন্ধুত্ব করতে হবে সম মানসিকতার মানুষের সাথে এবং আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে এই কাক ও চড়ুইদের, যাদের সাথে আমাদের জীবনের লক্ষ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে ।
নীতি- ২:
ঈগলের পাখির রয়েছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তি যার মাধ্যমে ঈগল আকাশে থাকা অবস্থাতেই ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দেখতে পায়, তাও একদম স্পষ্ট! ঈগল যখন তার শিকার খোঁজে, সে তার সব ফোকাস (লক্ষ্য) সেটার ওপর নিয়ে যায় এবং বেরিয়ে পড়ে শিকারের জন্য। যত বাধাই আসুক না কেন, ঈগল সেটিকে না পাওয়া পর্যন্ত কোনক্রমেই তার চোখ সরায় না।
এখান থেকে প্রাপ্য শিক্ষা:
ঈগল যেমন খুব স্পষ্টভাবে সবই দেখতে পায়, কিন্তু সে ফোকাস করে শুধুমাত্র একটি প্রাণীর উপরে, তেমন ভাবে আমাদেরও সব কিছু জানতে হবে, খোঁজ খবর রাখতে হবে তবে ফোকাস রাখতে হবে যেকোনো একটি কাজের উপর।
নিজেকে ভাল করে জানো, জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে নাও এবং সেই একটি লক্ষ্যের পিছনেই ছোটো। যত বিপত্তিই আসুক না কেন, ফোকাস হারানো চলবে না!
নীতি- ৩:
পাখির রাজা ঈগল তিনি সর্বদা জীবন্ত প্রাণীকে খাবার হিসেবে খেয়ে থাকে। ঈগল কখনোই কোন মৃত প্রাণীর জিনিস তারা ভক্ষণ করে না।
এখান থেকে প্রাপ্য শিক্ষা:
ঈগণরা রোজ রোজ নতুন শক্তির চাহিদায় কখনোই মৃত কিছু না খেয়ে বরং জীবন্ত ও নতুন কোন শিকারের পিছে ছুটে।
ঠিক একই ভাবে, আমাদের গতিশীল পৃথিবীতে নিজেকে এগিয়ে রাখার লক্ষ্যে নিজেকে সর্বদা নতুন সব তথ্য দিয়ে আপডেটেড রাখতে হবে। প্রতি সেকেন্ডেই বদলে যাচ্ছে চারপাশের অনেককিছু। তাই সার্বক্ষণিক আমাদের জানতে হবে সর্বশেষ তথ্য ও খবর। জীবনের লক্ষ্য আরও স্পষ্ট করার জন্য এসব নতুন তথ্য নতুন শক্তির যোগান দেয়।
তাছাড়াও, আমাদের আশেপাশের কিছু মানুষ মৃত ও পচা মাংসের মতই। তারা সর্বদা এমন সব কথাই বলে যা আমাদের নিরুৎসাহিত করে থাকে। তবে এখানেই শিক্ষা নিয়ে হাজির হয় ঈগল পাখি। ঈগল যেমন চড়ুই, কবুতরের মতো পাখিদের জন্য নিরুৎসাহিত না হয়ে আরও উঁচুতে উড্ডয়ন করে, আমাদেরও কোন কিছুতে কান না দিয়ে ঈগলের মতোই এগিয়ে যেতে হবে নিজের স্বপ্ন ছুঁতে।
নীতি- ৪:
ঝড় আসলে ঈগল পাখি তা এড়িয়ে না গিয়ে বরং ঝড়ের বেগকেই কাজে লাগিয়ে অনেক উঁচুতে উড়ে যায়। ঠিক অন্যান্য পাখিরা যখন পাতা ও গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকে, ঈগল তখন ঝড়ের বিরুদ্ধে তার ডানা ঝাপটে যায় এবং ঝড়ের বেগকেই কাজে লাগিয়ে মেঘকে ভেদ করে উপরে উঠে যায়। এমনকি একবার বাতাসের বেগ পেয়ে গেলেই ঈগল তার ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ শুরু করে দেয়, তখন সে ডানা ঝাপটানো বন্ধ করে দেয় এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবেই উপরে যেতে থাকে। ঝড়কে যেন ঈগল খুব ভালবাসে!
এখান থেকে প্রাপ্য শিক্ষা:
চ্যালেঞ্জকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নয়, সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। অন্য সব পাখি যখন আশ্রয়ের জন্য জায়গা খুঁজে, ঈগল পাখি তখন ঝড়ের মাঝেও উড্ডয়নে মগ্ন থাকে। ঝড়ের বেগকে কাজে লাগিয়েই ঈগল নিজেকে টিকিয়ে রাখে বৈরি আবহাওয়ায়।
তাই সাফল্যপিপাসু একজন স্বপ্নবাজকেও প্রতিটি চ্যালেঞ্জ সাদরে গ্রহণ করে নিতে হবে। একমাত্র প্রতিকূল পরিস্থিতিই পারে নতুন কিছু শেখাতে, আমাদের সমস্যা সমাধানের দারুণ দক্ষতাটি বাড়াতে। অতএব, চ্যালেঞ্জ আসলে এড়িয়ে না গিয়ে আমাদের উচিত তার মুখোমুখি হওয়া, দৃপ্ত হাতে লড়তে হবে। বাধা নয়, শক্তিতে পরিণত করতে হবে, ঠিক যেভাবে ঈগল পাখি করে।
নীতি- ৫:
একটা মেয়ে ঈগল ও ছেলে ঈগল যদি কখনো তারা একে অপরের বন্ধু হতে চায়, মেয়ে ঈগলটি প্রথমেই ছেলে ঈগলটির কমিটমেন্টের পরীক্ষা নিয়ে নেয়। কীভাবে পরিক্ষা করে জানেন?
তাদের সাক্ষাৎ হওয়ার পর মেয়ে ঈগলটি মাটিতে নেমে এসে গাছের একটি ডাল তুলে নেয়। তার পিছে পিছে ছেলে ঈগলটিও উড়ে উড়ে যায়। মেয়ে ঈগল পাখিটি সেই ডাল নিয়ে উপরের দিকে উড়ে যায় এবং একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় যাওয়ার পর গাছের সেই ডালটি নিচে ফেলে দেয়। তার পিছু নেওয়া সেই ছেলে ঈগল পাখিটি তা দেখে ডালটি ধরার জন্য দ্রুত নিচের দিকে যায়। ডালটি সেই ছেলে ঈগল মেয়ে ঈগলের কাছে ফিরিয়ে আনে।
এই কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি কয়েক ঘণ্টা ধরে হতেই থাকে যতক্ষণ পর্যন্ত মেয়ে ঈগল আশ্বস্ত হয় যে ছেলে ঈগলটি এই ডাল ফিরিয়ে আনার কাজটি আত্মস্থ করতে পেরেছে। আর এটা হচ্ছে তার কাছে ছেলে ঈগলটির ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার’ পরিচয় তুলে ধরে। অর্থাৎ, ইংরেজিতে আমরা যেটাকে বলি Commitment এটা হলো সেই কমিটমেন্ট। একমাত্র ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার’ পরিচয় দিতে পারলেই পরে তারা দুজন বন্ধু হতে পারে।
এখান থেকে প্রাপ্য শিক্ষা:
এখান থেকে আমাদের প্রাপ্য শিক্ষা এটাই যে, ব্যক্তিগত জীবনেই হোক আর পেশাগত জীবনেই হোক, কারোর সাথে কোন চুক্তিতে বা সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়ার আগে তার Commitment ভাল করে যাচাই করে নিতে হবে। এমন কারোর সাথে কাজে যোগ দিতে হবে যে কাজের প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ও মনোযোগী থাকবে।
নিজের কর্মচারী বা জুনিয়রদের অ্যাসাইনমেন্ট দিতে হবে এবং যাচাই করতে হবে যে আমার তত্ত্বাবধান ব্যতীত সে কতটুকু ভালো কাজ করেছে, কত মনোযোগ ও গুরুত্বের সাথে কাজ করেছে।
ঈগল পাখি আমাদের এই শিক্ষাটা কত সুন্দর করেই না দিয়েছে!
সোর্সঃ টেন-মিনিট স্কুল
0 Comments